ছোট ভাই সাজ্জাত মনিকে ঘিরেই যেন অঞ্জনার সুখের পৃথিবী
আমার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। আমার বাবা শ্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সাহা আর মা শ্রীমতি কমলা সাহা। বাবা ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করতেন। অনেক দিন হলো আমার বাবা মাকে হারিয়েছি। আর মা-বাবাহীন এই আমি আজ ভীষণ একা। তাদের কথা আমার প্রতিটি মুহূর্তেই মনে পড়ে’- জীবনের সবচেয়ে কষ্টদায়ক অধ্যায়ের কথা বলতে গিয়ে এমন করেই বলছিলেন চিত্রনায়ীকা অঞ্জনা। আর জীবনের এই পর্যায়ে এসে চলচ্চিত্রের একজন মানুষ হয়েও গুটিকতক মানুষ ছাড়া তেমন কারো সঙ্গেই যোগাযোগ হয় না বলেও মন থেকে এই মাধ্যমটির প্রতি এখন কেন যেন তার টান আসে না। আর তাই নতুন করে নতুন ছবিতে কাজ করার উৎসাহও যেন পান না তিনি। তবে অঞ্জনা বলেন ‘চিত্রনায়িকা নুতনের সঙ্গে আমার যোগাযোগটা খুবই নিয়মিত। প্রতিনিয়তই
তার সঙ্গে আমার নানান বিষয় নিয়ে কথা হয়।’ মূলত অঞ্জনা একজন কত্থক নৃত্যশিল্পী। ভরত নাট্যম ও মনিপুরী নৃত্যও শিখেছেন তিনি। আর নাচের সবকিছুই শিখেছেন তিনি কলকাতায়। আর পুরোদস্তুর একজন নৃত্যশিল্পী হয়েও তিনি হয়েছিলেন একজন চিত্রনায়িকা। তার অভিনীত প্রথম ছবি বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’। কিন্তু দর্শকের সামনে তিনি প্রথম আসেন মাসুদ পারভেজের ‘দস্যু বন্ধু’ ছবির মাধ্যমে। এক সময়ের এই ব্যস্ত নায়িকা এখন আবারো ফিরে গেছেন তার পুরোনো পরিচয়ে অর্থাৎ তিনি এখন নাচ নিয়েই বেশি ব্যস্ত। দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি নৃত্যানুষ্ঠান করেন। অঞ্জনা বলেন ‘আমিতো মূলত একজন নৃত্যশিল্পী। তাই চলচ্চিত্র মাধ্যমটিতে কাজ করতে না পারলে অন্য শিল্পীদের মধ্যে যে হতাশা কাজ করে আমার মাঝে কিন্তু তা নেই। কারণ আমিতো আমার মূল কাজ প্রতিনিয় করেই যাচ্ছি। তাছাড়া এখন আমি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলের বিভিন্ন টকশোসহ নৃত্যানুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করছি। তাই খুব যে অবসরও আছি আমি তা বলা যাবেনা। সমাজের আর দশজন মানুষের মতোই তিনি তার ঘরের সব কাজ করেন। ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দরকারি জিনিস প্রতিদিন বাজারে গিয়ে কিনতে না পারলেও সপ্তাহের একদিন
বোরকা পড়ে প্রয়োজনীয় সব জিনিস কিনে নিয়ে আসেন। অঞ্জনা বলেন ‘আসলে নিজ হাতে বাজার করতে পারার আনন্দটা অন্যরকম। তাছাড়া বাজারদর সম্পর্কেও অভিহিত থাকা যায়।’ অবসর সময়টুকুতে অঞ্জনা ভাবেন তার আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে। আর সেই সঙ্গে নিজের ড্রেস ডিজাইন তিনি নিজেই করে নেন । তিনি মহিলা যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত অঞ্জনা । তিনি এই সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। ডা. অরুপ রতন চৌধুরীর মাদকবিরোধী সংগঠন ‘মানস’এরও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অঞ্জনা। সুতরাং চলচ্চিত্র মাধ্যম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে খুব যে অলস সময় কাটাচ্ছেন তা অন্তত বলা যায় না। কারণ নিজের ব্যস্ততাসহ তিনি এখন বেশ কিছু সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত। ছোট ভাই সাজ্জাত মনিকে ঘিরেই যেন অঞ্জনার সুখের পৃথিবী। তখন সবকিছু ভুলে গিয়ে অঞ্জনা পুরোপুরি মগ্ন থাকেন শুধুই পরিবার আর এর সদস্যদের সুখ-দুঃখের মাঝে। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে অঞ্জনা নাচের সঙ্গে জড়িত। নৃত্যের জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন। দেশের বাইরে কলকাতাতেও পেয়েছেন সে পুরস্কার। বাবুল চৌধুরীর সেতু ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে তার যাত্রা শুরু হয়। তবে পর্দায় প্রথম মুক্তি পায় মাসুদ পারভেজের পরিচালনায় নির্মিত দস্যু বনহুর ছবিটি।